ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা...
বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। এই যুগে মানুষ তাই প্রথাগত চাকরিতে বিশ্বাসী নয়। বরং প্রথাগত চাকরির বাইরে গিয়ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইনকামের পথে ছুটে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে তাই বাড়তি আয়ের নেশায় অনেকেই চাকরির পাশাপাশি আয়ের বিকল্প পথের সন্ধান করছে। আর যারা চাকরির পাশাপাশি কোন স্কিল রপ্ত করে নিজের মেধাকে সঠিক স্থানে কাজে লাগাতে চান তাদের জন্য একটি উত্তম মাধ্যম হল ওয়ার্ডপ্রেস শেখা। কিন্তু ওয়ার্ডপ্রেস কি? ওয়ার্ডপ্রেস কেন শিখবেন? এরকম প্রশ্নের উত্তর কোথায় পাবেন? ওয়ার্ডপ্রেস বেসিক টু এডভান্স গাইডলাইন সম্পর্কে জানতে হলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত দেখুন।
ওয়ার্ডপ্রেস কি?
কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের একটি অন্যতম শাখা হল ওয়ার্ডপ্রেস। এটি ওয়ার্ডপ্রেস ফাউন্ডেশনের দ্বারা ডেভেলপ হয়ে ২০০৩ সালে সর্বপ্রথম টেক বাজারে প্রবেশ করে। প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ পিএইচপি (PHP) দ্বারা এর পুরোপুরি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি বিভিন্ন জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম যেমন ইউনিক্স, মাইএসকিউএল (MySQL) ডাটাবেইজ এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত। এটি মূলত ব্লগিং এবং ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম।
ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে কন্টেন্টকে ম্যানেজ করে নানান রকম ফিচারের মাধ্যমে ডেভেলপ করে কন্টেন্টকে আরও বেশি ফুটিয়ে তোলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ইনবিল্ট টেমপ্লেট সিস্টেম। যা একজন ব্যবহারকারীকে স্মুথলি ব্লগ লেখার ক্ষেত্রে এবং ওয়েবসাইটে যেকোনো ধরণের থিম তৈরি করার ক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করে। একজন গ্রাহকের চাহিদার উপর ভিত্তি করে অনেক ধরণের থিম এখানে রয়েছে— যা ব্লগ এবং ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্টের জন্য ব্যবহার করা হয়। ওয়ার্ডপ্রেসে প্লাগিন আর্কিটেকচার রয়েছে— যা একটি ব্লগের এক্সটেনশন এর সাথে মিলিতভাবে বিভিন্ন ফিচার অনুযায়ী কার্যাবলী সম্পন্ন করে।
ওয়ার্ডপ্রেস কেন শিখবেন?
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন হল যে "ওয়ার্ডপ্রেস কেন শেখা উচিত"। যারা ওয়ার্ডপ্রেসে একেবারেই নতুন তাদের কাছে এই প্রশ্নটির উত্তর জানা আবশ্যক। এছাড়াও যারা কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থেকে ওয়েব ডিজাইনে ক্যারিয়ার গড়তে চাইছেন তাদের জন্যও আবশ্যিক একটি বিষয় হল ওয়ার্ডপ্রেস।
কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ওয়ার্ডপ্রেস। ব্লগিং প্লাটফর্মের মধ্যে দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ তা একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্লগিং প্লাটফর্মে ওয়ার্ডপ্রেস অবিচ্ছেদ্য অংশ— বর্তমান প্রায় ৩৪% ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে তৈরি।
তাই আপনি যদি যুগের চাহিদা-বহুল ক্ষেত্র কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে জ্ঞান আরোহণ করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে ধাপে ধাপে এ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শেখার-পূর্বে আপনাকে অবশ্যই এই সেক্টরের টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতেও পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এছাড়াও ওয়ার্ডপ্রেস একই সাথে নানান ধরণের ফিচার, মাল্টিমিডিয়া সাপোর্ট, এসইও অপটিমাইজেশন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
তাই চলুন কেন আপনার ওয়ার্ডপ্রেস শেখা উচিত তা নিয়ে কয়েকটি পয়েন্ট জেনে নেওয়া যাক -
১. ওয়ার্ড প্রেস হল একটি ওপেন সোর্স মাধ্যম
ওয়ার্ডপ্রেস শেখার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি সম্পূর্ণরূপে ফ্রি এবং ওপেন সোর্স মাধ্যম। এর অর্থ হল আপনি চাইলে যখন তখন আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ফ্রিতে নতুন নতুন ফিচারসমুহ যুক্ত করতে পারবেন, সেই সাথে আপনার ব্যবহৃত বর্তমান ওয়েবসাইটকে আরও বেশি ইউজার-ফ্রেন্ডলি করতে পারবেন। একজন বিগিনার হিসেবে কিংবা একজন মিডিয়াম লেভেল ওয়েব প্রোগ্রামার হিসেবে, ওয়ার্ডপ্রেস শেখা এখন আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ আপনি যদি প্রোগ্রামার হন তাহলে আপনি ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে ওয়েবসাইট তৈরির পাশাপাশি নতুন নতুন আকর্ষনীয় ফিচার যুক্ত করতে পারবেন। বর্তমান সময়ে কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রায় ৬১.৮% জায়গা জুড়ে আছে ওয়ার্ডপ্রেস। তাই আপনি যদি সামান্য টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের হয়ে থাকেন, খুব সহজে আপনার পিসিতে ওয়ার্ডপ্রেসের লোকাল ভার্সন ডাউনলোড করে কাজ শুরু করতে পারেন।
২. ওয়ার্ডপ্রেস ফ্লেক্সিবিলিটি মেইনটেইন করে
ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি খুবই ফ্লেক্সিবল একটি মাধ্যম। এর মূল সুবিধা হল আপনার যদি কোডিং এ শূন্য জ্ঞানও থাকে তবুও আপনি ওয়ার্ডপ্রেসে কাজ শুরু করতে পারবেন। ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখে আপনি খুব সহজে ই-কমার্স ওয়েবসাইট, বিজনেস ওয়েবসাইট, কিংবা ডাইনামিক ব্লগিং সাইট তৈরি করতে পারবেন।
৩. খুব সহজে এসইও অপটিমাইজেশন
বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম মাধ্যম হল এসইও (SEO)। এছাড়া ই-কমার্স বিজনেস থেকে শুরু করে আপনি যদি ইন্টারনেট ব্রান্ডিং এর মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে চান আপনাকে সবার আগে এসইও নিয়েই ভাবতে হবে। তাই আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখেন সেক্ষেত্রে আপনি সার্চ ইঞ্জিনে ভালো র্যাংকিং এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজে আপনার ক্যারিয়ারে দ্রুত এগিয়ে থাকতে পারবেন। টাইটেল, হেডিং, মেটা ডেসক্রিপশন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে আপনি খুব সহজে ওয়ার্ডপ্রেস সাইট অপটিমাইজ করতে পারবেন। ফলস্বরুপ অধিক ট্রাফিক আপনার সাইটে এংগেজ করতে পারবে।
৪. প্লাগিন (Plugin) এবং Widgets
আপনার যদি কোডিং এ শূন্য জ্ঞানও থাকে তবুও আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করে খুব সহজে নিজের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি প্রয়োজনীয় সকল তথ্য এড করতে পারবেন কোন ঝামেলা ছাড়া। একই সাথে আপনি ই-কমার্স শপ, ডিজিটাল এনালিটিক্স, এসইও ,সোশ্যাল শেয়ারিং সহ গ্রাহকদের জন্য নানা ধরনের ফিচার যুক্ত করতে পারবেন। তাই আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চান তাহলে আপনাকে থিম এবং প্লাগিন সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা নিয়েই কাজে নেমে পড়তে হবে। তাহলেই আপনি যেকোনো ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।
৫. কাস্টম ডিজাইন ফ্লেক্সিবিলিটি
কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হিসাবে ওয়ার্ডপ্রেস শেখা যথেষ্ট সহজ বলে আপনি খুব সহজে ওয়েবসাইট কাস্টমাইজড করতে পারবেন এবং সেই সাথে আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ডিজাইনের ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এর সহজ ইন্টারফেসকে কাজে লাগিয়ে আপনি খুব সহজে নিজের আইডিয়া জেনারেট করে আপনার নিজস্ব ব্রান্ড বিল্ড-আপ করতে পারবেন।
তাই আপনি যদি আপনার কাস্টমারদের কিংবা আপনার ক্লায়েন্টদের ইউনিক ওয়েবসাইট উপহার দিতে চান সেক্ষেত্রে আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখে বর্তমান সময়ের সবথেকে জনপ্রিয় সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।
৬. এটি ইন্সটল করা বেশ সহজ
ওয়ার্ডপ্রেসে খুব সহজে আপনি প্লাগিন ইনস্টলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ফিচার যুক্ত করতে পারবেন। বিগত দিনে কোন রকম জটিল কোড ব্যবহার করা ছাড়াই যেমন এমএস অফিস ব্যবহার করা যেত, ওয়ার্ডপ্রেসও অনেকটা সেরকম। তাই আপনি যদি এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান সেক্ষেত্রে আপনি খুব সহজে ওয়ার্ডপ্রেস কোন হোস্টিং এ বা লোকাল হোস্টের মাধ্যমে আপনার পিসিতে ইনস্টল করে ওয়েবসাইট তৈরির কাজ শেখা শুরু করতে পারেন।
৭. সব ধরণের মাল্টিমিডিয়া সাপোর্ট করে
ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে আপনি বিভিন্ন ধরণের মাল্টিমিডিয়া যেমন ভিডিও, অডিও কিংবা ইমেজ যুক্ত করতে পারেন। আপনি হাইপার-লিংক ডকুমেন্ট যুক্ত করতে পারেন। ওয়ার্ডপ্রেস শুধুমাত্র আপনার ওয়েবসাইটে ডাটা স্টোর করতে সাহায্য করে তা কিন্তু নয় বরং একই সাথে আপনার ওয়েবসাইটকে বেশ আকর্ষণীয় এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি করে তুলতে সাহায্য করে। তাই এই প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় নিজেকে একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখতে হবে।
৮. হেল্প-ফুল লার্নিং কমিউনিটিতে শেখার সুযোগ
ওয়ার্ডপ্রেস বিষয়টা অতটা জটিল না হলেও অনেকেই প্রথম দিকে শিখতে গিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু আপনি যদি অনলাইন কিংবা অফলাইনে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখতে চান সেক্ষেত্রে এর হেল্প-ফুল লার্নিং কমিউনিটি আপনাকে এই যাত্রায় আনন্দের সাথে শেখার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে। তাছাড়া যত ধরণের সহজ কিংবা জটিল সমস্যা আছে তা আপনি ওয়ার্ডপ্রেস সাপোর্ট সিস্টেমের সাথে যোগাযোগ করে তার উপযুক্ত সমাধান পেয়ে যাবেন। লিংক -www.wordpress.org.
৯. ওয়ার্ডপ্রেস ১০০ এর অধিক ভাষা সাপোর্ট করে
কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ওয়ার্ডপ্রেস একই সাথে ১০০ এর অধিক ভাষা সাপোর্ট করে। তাই আপনি সারাবিশ্বের যেকোনো ওয়েবসাইট আপনার ভাষায় ট্রান্সলেটের করতে পারবেন খুব সহজে। সুতরাং আপনার লোকাল ভাষায় ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রেও ওয়ার্ডপ্রেস খুব কার্যকরী। পাশাপাশি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে সাপোর্ট দিতে পারবেন।
১০. অসাধারণ ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ
আপনি যদি এই টেক দুনিয়ায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চান সেক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন বেশ সহজে। সুতরাং আপনি যদি অনলাইনে নিজের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি নিজেকে একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে আপনি যেমন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে পারবেন, পাশাপাশি আপনি প্লাগিন ডেভেলপমেন্টেও কাজ করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে নিজের কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলতে পারবেন। আপনি যদি নিজেকে একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন সেক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি প্রতি মাসে ৫০ হাজারের বেশি টাকা আয় করতে পারবেন, যা বাংলাদেশে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে করছেও।
.
ওয়ার্ডপ্রেসে ক্যারিয়ার গঠন করতে কেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন?
আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেসে এক্সপার্ট হতে চান তাহলে এটি সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনেই এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া প্রযুক্তি, প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজসহ টেকনিক্যাল টার্মগুলোতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এভাবে আপনার যদি ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে পরিপূর্ণ দক্ষতা তৈরি হয় তবে এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গঠন সহজ হবে। আপনি বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, ভিডিও টিউটোরিয়াল, কমিউনিটি ফোরাম, অনলাইন কোর্স কিংবা ব্লগের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে পারবেন। তাছাড়া ওয়ার্ডপ্রেসের অফিশিয়াল সাইট থেকেও সব ধরণের ডকুমেন্টেশন পাবেন— যার মাধ্যমে আপনি ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা অর্জন করতে পারবেন।
একই সাথে ওয়ার্ডপ্রেসে প্রতিনিয়ত নতুন যে পরিবর্তনগুলো আসে, নতুন যে ফিচারগুলো যুক্ত হয় তা সম্পূর্ণরূপে অফিশিয়াল আপডেট ডকুমেন্টের মাধ্যমে জানানো হয়— সেখান থেকে আপডেট নলেজ নিতে পারবেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। বেশিরভাগ সময় নিম্নমানের প্লাগিন ব্যবহারের কারণে ওয়েবসাইট বেশি ধীরগতিতে কাজ করে। আনরিলাইবল সোর্স থেকে প্লাগিন ব্যবহার করলে সিকিউরিটি নিয়েও ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। এসব ব্যবহারকারীদের উপর বেশ মারাত্মক প্রভাব ফেলে। তাই ব্লগিংয়ের জন্য সাইট কিংবা থিম নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক প্লাগিন কিংবা থিম আপনাকে বেছে নেওয়া শিখতে হবে। প্রোপার কোড ব্যবহার করতে হবে।
সবশেষে বলবো, ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে উপরের বিষয়গুলো মনে রাখা বেশি গুরুত্বর্পূণ। আর নিয়মিত শেখার মানসিকতাও প্রয়োজন। তবেই আপনি একজন ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েব ডেভলপার হিসাবে ভালো করবেন।
ওয়ার্ডপ্রেস শিখে কেমন ক্যারিয়ার গড়া যায়?
এখানে এমন কেন নিয়ম নেই যে, এই এই নিয়ম অনুসরণ করলেই আপনি একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনাকে কিছু বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে যেমন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কীভাবে কাজ করে, এইচটিএমএল (HTML), সিএসএস (CSS), জাভাস্ক্রিপ্ট (JavaScript), মাইএসকিউএল (MySQL), অপারেটিং সিস্টেম, সার্চ ইঞ্জিন, ইত্যাদি।
একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভলপার মূলত ফ্রিল্যান্সিং কাজ করেন এবং বিভিন্ন ওপেন সোর্স প্রজেক্টে কাজ করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রার্থীর কোডিং স্কিল এবং থিম কাস্টমাইজেশন দক্ষতাকে বিবেচনা করে কর্মী নিয়োগ দেন। আর এভাবে আপনি ওয়ার্ডপ্রেস শিখে খুব সহজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপার হিসাবে কাজ করতে পারবেন।
সুতরাং বলা যায় ওয়ার্ডপ্রেস স্কিল ডেভলপ করে আপনি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেল পজিশনে ওয়েব ডেভলপার, মিড লেভেল ওয়েব ডিজাইনার এবং ফন্ট-এন্ড ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।
ওয়ার্ডপ্রেসে কি ধরণের কর্মক্ষেত্র রয়েছে?
একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন। একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার নিজেকে ওয়েব ডেভেলপার, ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ওয়ার্ডপ্রেস ডিজাইনার, ওয়ার্ডপ্রেস রাইটার, ওয়ার্ডপ্রেস এডুকেটরসহ নানান ক্ষেত্রে নিজের ক্যারিয়ার বিল্ড-আপ করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপারের এ ধরণের কর্মক্ষেত্র উল্লেখ আছে।
সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে ওয়ার্ডপ্রেস জবের যেমন ক্ষেত্র বেড়েছে সেই সাথে জ্ঞানের পরিধিও বাড়ানো প্রয়োজন পড়ছে। তাই এক্ষেত্রে একই যোগ্যতা দিয়ে আপনি প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন ভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিজের ক্যারিয়ার সাজিয়ে তুলতে পারবেন। এছাড়াও একজন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট, কন্টেন্ট পাবলিশিং, কিংবা কন্টেন্ট পাবলিশার হয়েও ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। তবে আপনি যদি একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হয়ে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার বেছে নিতে চান সেক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে আপনার জন্য সহজ সমাধান। যেখানে আপনি নিজেকে সঠিকভাবে ডেভেলপ করতে পারবেন, সেই সাথে আপনার চাহিদা অনুসারে কাজ পেয়ে যাবেন।
ক্যারিয়ার হিসেবে ওয়ার্ডপ্রেসের চাহিদা কেমন?
বর্তমান সময়ে অনেকে ক্যারিয়ার হিসাবে চাকরির পাশাপাশি আরও নানান পেশায় নিজেকে তৈরি করছে। আর সে ধারাবাহিকতায় যুগের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে অন্যতম একটি ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত পেয়েছে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েব ডেভলপার। এজন্য আজকাল অনেকেই চাকরী-পড়াশোনার পাশাপাশি ওয়ার্ডপ্রেসের শেখার দিকে মনোনিবেশ করছে। অনেকেই নিজেকে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসবে গড়ে তুলছেন অথবা অনেকেই নিজের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ওয়ার্ডপ্রেসের দিকে ঝুঁকছেন। বর্তমান সময়ে ব্লগিং, ওয়েব ডিজাইনিং এবং রাইটিংয়ের বেশ চাহিদা। পাশাপাশি এই চাহিদার ব্যাপক সম্প্রসারণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেজন্য আপনি যদি সময় নিয়ে এই স্কিলটি রপ্ত করেন তাহলে আপনি খুব সহজেই একটি উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবেন।
বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগগুলো মনিটাইজিংয়ের মাধ্যমে এড, প্রমোশনাল পোস্ট, এফিলিয়েট এবং অন্যান্য সাইটের মাধ্যমে আয় করছে। পাশাপাশি এই কাজগুলো বিশ্বের সামনে আপনাকে মেলে ধরতে এবং নতুন আয়ের উৎস তৈরিতে সাহায্য করবে। ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে খুব সহজে আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক যেমন বৃদ্ধি পাবে ঠিক তেমনি বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষের কাছে আপনার কাজ সুনাম নিয়ে আসবে।
একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপারের স্যালারি কেমন?
একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপারের বেতন ঠিক কত হবে তা সম্পূর্ণরূপে তার দক্ষতার উপর নির্ভর করে। একজন ডেভেলপার ঠিক কত দ্রুততর সময়ে নতুন প্লাগিন তৈরি করতে পারে, প্রবলেম সলভ করতে পারে তার উপর সম্পূর্ণরূপে তার স্যালারি নির্ভর করে। তবে একজন নতুন ওয়েব ডেভেলপারের স্যালারি অনেক বেশি তা ভাবা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। সাধারণত দক্ষতা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে একজন দক্ষ পর্যায়ের ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার ৪৫-৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক-দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে।
Comments
Post a Comment